খেজুরের গুড়
ভাপাপিঠায় সাধারণ গুড়ের জায়গায় খেজুরের গুড় অমায়িক লাগে। পুলি পিঠায় ,নারকেল পুলিতে নারকেলের সাথে চিনির জায়গায় এই খেজুরের গুড় দেওয়া যেতে পারে। প্রতিদিনের চা তে এই গুড় খাওয়া যেতে পারে। খাওয়া যেতে পারে শরবত হিসেবে।মুড়ি, মুড়কির সাথে, নারু তৈরিতে। পায়েস, ফিরনি তৈরিতে ।
- খেজুরের গুড়ের উপকারিতা কী?
- ডায়াবেটিস রোগীরা কী এই গুড় খেতে পারবে?
চকলেট/বীজগুড় |
- কী এমন আহামরি স্বাদ যে দাম অন্যান্য গুড়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি?
- খেজুর গাছের এত রস আসে কোথা থেকে?
জানতে হলে পুরো পোস্টটি পড়ুন।
আল্লাহর অনেকগুলো নিয়ামতের একটি হচ্ছে খেজুরের রস আর সেই রস থেকে তৈরি হওয়া গুড়। খেজুর গাছের রস জ্বাল দিয়ে বিভিন্ন স্বাদের গুড় তৈরি করা রাজশাহী, যশোর, নাটোর, ঝিনাইদহের গ্রামের মানুষদের অনেক পুরোনো একটি প্রচলন। শুনে আনন্দিত হবেন খেজুরের জন্য মধ্যপ্রাচ্য বিখ্যাত হলেও যশোরের জিআই পণ্য এই খেজুরের গুড়।
অন্যান্য গুড়ের চেয়ে জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে কারণ হচ্ছে এর মন মাতানো একটা মিস্টি খেজুরের স্বাদ ও ঘ্রাণ। অন্যান্য যেকোনো সময়ের তুলনায় শীতে এই গুড়ের চাহিদা থাকে তুঙ্গে? কেনো বলেন তো? শীতে পিঠা-পুলি আর মিস্টি খাবার তৈরিতে এর ব্যবহারের জুড়ি নেই।
এটা যে শুধু স্বাদে সেরা ব্যাপারটা এমন নয়। এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো।খেজুরের গুড়ে থাকা ফসফরাস, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়ামের মতো খনিজগুলোর উপকারিতা জ্ঞানী মাত্রই স্বীকার করবেন।
এবার আসেন খেজুর গাছের কান্ড কাটলে রস আসে কোত্থেকে সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যাক।
খেজুর গাছের মিষ্টি রস আসে ফ্লোয়েম (Phloem) টিস্যু থেকে।
খেজুর গাছের পাতা ফটোসিন্থেসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্য তৈরি করে, যা শীতকালে মাটিতে রস কম থাকা আর সূর্যালোক কম থাকায় উৎপন্ন করতে পারেনা। তাই শীতকে কেন্দ্র করে খেজুর গাছ আগে থেকেই অধিক খাবার নিজের দেহে স্টার্চরুপে মজুদ রাখে। ঠান্ডার কারণে খেজুর গাছের এক ধরণের এনজাইম ক্ষরণ হয় । সেই এনজাইমটাই স্টার্চকে ভেঙে প্রাকৃতিক চিনিতে রুপান্তর করে। আর মূলে থেকে পানি গিয়ে সেই চিনির সাথে মিশে তৈরি হয় মিস্টি রস, আর যা গাছের ডগার কাটা অংশ থেকে চুইয়ে পড়ে। সেই রস জ্বাল দিলেই তৈরি হয় গুড়। মূল থেকে শুধু পানিই যায় না, যায় মানব দেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মিনারেলস।
এবার আসি ডায়াবেটিস রোগীর জন্য কী কোনো সমস্যা আছে কিনা। যাদের ইন্সুলিন তৈরির সমস্যা, তাদের জন্য চিনি যেমন ক্ষতিকর এটাও তেমনই, একটু কম ক্ষতিকর ,তবে আহামরি কম নাহ। চিনি খেলে যদি ১০০% ক্ষতি হয় তো গুড় খেলে ক্ষতি হবে ৯০%। তবে পুষ্টিগুণ বিবেচনায় গুড়ের সাথে চিনির তুলনা হয় না।
আচ্ছা এই গুড় কিভাবে খায়?
ভাপা পিঠা |
পাউরুটি বা রুটির সাথে জেলির মতো ঝোলা গুড়টা আমি অধমের কাছে সবচেয়ে পছন্দের।
এবার আসি দামটা নিয়ে। বাজারে যেখানে সাধারণ গুড় ১২০-১৩০ টাকায় পাওয়া যায়, তখন এতো দামে এই গুড় কেনার কারণটা কী হতে পারে। নামীদামী ব্রান্ডের থেকে নিলে প্রতি কেজি হাজারটাকাও পড়ে যায়। আবার কম দামে নিলে ভেজাল মেশানোর ভয়। উপকারিতা ভেবে নেওয়া গুড়ে যদি স্বাস্থ্যের ক্ষতিই হয় তাহলে লাভটা হলো কী! আবার কতগুলো যে ভ্যারিয়েন্ট , নিবো কোনটা!
আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণে মনে হয়েছে গুড়ের দাম ৩০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে কখনোই ৫০০ টাকার উপরে যাওয়া উচিত নয়। আপনি যখন গুড় কিনবেন আপনাকে বিশ্বাসযোগ্য সোর্স থেকে গুড় কেনাই ভালো । কম দামের লোভে পড়ে হাইডোজ, চিনি, আটা মিশ্রিত গুড় কেনা যেমন উচিত নয় তেমনি বেশি দাম মানেই যে বেশি ভালো ব্যাপারটা মোটেও এমন নয়।
গুড় নিয়ে পরবর্তী পাঠককে আপনার কোনো পরামর্শ দেওয়ার থাকলে কমেন্ট বক্সটা আপনার জন্যই।
আপনার শীত হোক পিঠাপুলিময়, আর শাক-সবজিময় সেই কামনায় আজ এখানেই।
Comments
Post a Comment